দেশে আসছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট! বললেন ইলেন মার্কস

দেশে আসছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট! বন্ধ করতে পারবে না সরকার?যা বললেন ইলেন মার্কস

বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে সরকার সক্রিয় উদ্যোগ নিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকের পর স্টারলিংকের সম্ভাব্য সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই বৈঠকের পর জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে কী ধরনের সুফল পাওয়া যেতে পারে?

স্টারলিংক সম্পূর্ণ স্যাটেলাইট-নির্ভর একটি ইন্টারনেট সেবা, এটি পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ মূলত সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাই স্টারলিংকের আগমন দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে জানান প্রযুক্তিবিদরা।স্টারলিংকের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই ইন্টারনেট সেবার জন্য ব্যবহারকারীদের ‘স্টারলিংক কিট’ কিনতে হবে, যার দাম বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৪৩ থেকে ৭৪ হাজার টাকা। এছাড়া মাসিক সেবামূল্য প্রায় ১৫ হাজার টাকা, এটি অনেকের জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে। বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলের সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি সহজলভ্য হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অধ্যাপক ড. রিফাত শাহরিয়ার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এটি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে। কিন্তু আমাদেরকে বাকিগুলো ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্টানগুলো বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র এটির উপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার অনেক ভালো হবে। তিনি আরও জানান, এর দাম অনেক বেশি হওয়ায় গ্রামীন পর্যায়ে এটি ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু আইটি কর্পোরেট হাউজগুলোর জন্য এটি সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে বলে আমি মনে করি।এদিকে বাংলাদেশে বর্তমান মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গড় গতি যথাক্রমে ৪০ ও ৫১ এমবিপিএস। এর বিপরীতে স্টারলিংকের গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শহর ও গ্রামের মধ্যে ইন্টারনেট বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে এবং ফ্রিল্যান্সিং ও অনলাইনভিত্তিক কাজের সুযোগ বাড়াবে। পাশাপাশি দুর্যোগকালীন সময়ে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে উচ্চমূল্যের কারণে এটি সাধারণ গ্রাহকদের জন্য সীমিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও আইটি হাউসগুলোর জন্য স্টারলিংক একটি কার্যকর সমাধান হলেও এটি প্রচলিত ইন্টারনেট সেবাদাতাদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করাই উত্তম হবে।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, দেশে বিদ্যমান ইন্টারনেট–সেবার মান নিয়ে সমস্যা রয়েছে। স্যাটেলাইট সেবা এলে যাঁরা মানসম্পন্ন ইন্টারনেট চান, তাঁদের জন্য বিকল্প সুযোগ তৈরি হবে। তবে দাম বেশি হওয়ায় সকলে হয়তো এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে না।তিনি আরও জানান, সরকার যদি চায় তাহলে গুরুত্বপূর্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবে। যদিও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও আইটি হাউসগুলোর জন্য স্টারলিংক অত্যান্ত জনপ্রিয় হতে পারে বলে ও জানান তিনি। যদিও স্টারলিংক ইতোমধ্যে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালুর আগ্রহ দেখিয়েছে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করেছে। তবে এর অনুমোদন ও কার্যকর নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, কবে নাগাদ এটি চালু হবে। বিশেষ করে, গোপনীয়তা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ নিয়ে সরকার ও স্টারলিংকের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন হতে পারে। সরকার ও স্টারলিংক পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে বাংলাদেশের ইন্টারনেট খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top